Modi government should admit faults

প্র থম বছর না পুরোতেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের মধুচন্দ্রিমা, ‘শেষ হল’ না বলে বলাই যায়, হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। এটা ঠিক যে এই মুহূর্তে মোদী সরকারের সামনে তেমন কোনও বড় সংকট নেই। এটাও ঠিক যে, এখন যাঁরা তাঁর সমালোচক, তাঁদের অনেকেই এক বছর আগে তাঁর আদ্যন্ত সমর্থক ছিলেন। এবং সেটাই তাঁদের হতাশা ও ক্ষোভের প্রধান কারণ। মোদীর উপর ভর করে একটা ‘বিগ ব্যাং’ সংস্কারের প্রত্যাশায় ছিলেন যাঁরা, তাঁরাই আজ বিক্ষুব্ধদের প্রথম সারিতে।

ব্যাপারটা প্রত্যাশিত ছিল না কি? ভোটের সময়ে মোদীকে ঘিরে যে ধরনের একটা অবাস্তব প্রত্যাশা ফেনিয়ে উঠে ভারতের আকাশ ছেয়ে ফেলেছিল, তার পর তো এই অতল হতাশার সাগরে ডুববারই কথা! মোদীভক্তরা আজ মাথা চাপড়াচ্ছেন যে, যতটা ভাবা গিয়েছিল, তাঁদের ভগবানের অতটা বল নেই। প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছিটকে আসছে: কোথায় লগ্নি? কোথায় চাকরি? সরকারি কর্তারা অস্থির অশান্ত যুবশক্তিকে ধৈর্য ধরতে বলছেন, আশ্বাস দিচ্ছেন ‘অচ্ছে দিন আনেওয়ালে হৈ’। উচ্চাভিলাষী মধ্যবিত্ত সমাজ কিন্তু আর অপেক্ষায় রাজি নন।

সত্তরের দশকে ইন্দিরা গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর কখনও এমন ভাবে হাতে-গোনা কয়েক জনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে কি? মনে হয় না। কিন্তু অদ্ভুত কাণ্ড, মোদী যাঁদের উপর ভরসা রাখছেন, তাঁদের দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বিজেপি আর তার আদর্শগত ভ্রাতা-সংগঠন আরএসএস-এ আজ ট্যালেন্টের ঘোর অনটন। মোদীর অ্যাজেন্ডাকে রূপায়িত করে এঁরা কি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন?

২০১৪’র শেষে মোদী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনে যে ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করলেন, সে কথাই ধরা যাক। চোরাপথের সংস্কার বোধহয় একেই বলে। যে কারণে বিজেপি আগে কংগ্রেসের প্রচুর সমালোচনা করেছে, নিজেরা ক্ষমতায় এসে তারা সেই পথেরই পথিক হল, এবং শেষ পর্যন্ত সংসদীয় কমিটির উপর দায় চাপিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হল। এত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যে কত রকম ঝামেলায় পড়তে হল! একে তো অধ্যাদেশ আনার সময়টা ওঁরা এতই খারাপ বাছলেন! অসময়ের বর্ষা আর শিলাবৃষ্টিতে যখন কৃষকসমাজ এমনিতেই বিপন্ন, সেই চূড়ান্ত অসময়ে মোদী-জেটলি কোমরে গামছা বেঁধে অসাধ্য সাধনে নেমে পড়লেন। যাঁদের নিজেদের মধ্যে অনেক কাল জলচল বন্ধ, সে রকম বিরোধী নেতারাও হাতে হাতে মিলিয়ে এককাট্টা বিরোধিতায় নামার সুযোগ পেলেন। এই বিরোধিতার তাগিদে এক দিকে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজনসমাজ পার্টি, অন্য দিকে বাম ফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ ভাবই হয়ে গেল। এ দিকে বিজেপির যে সব শরিক এনডিএ-তে ছিল, তারাও আলাদা হয়ে গেল। ভাঙন ধরল সঙ্ঘ-পরিবারেও। এতেও শেষ নয়। অজান্তেই কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গাঁধীও একটা নতুন ‘জীবনরেখা’ পেয়ে গেলেন। অথচ দু’মাস অজ্ঞাতবাসের পর তাঁর প্রত্যাবর্তন এমন কণ্টকহীন না-ও হতে পারত। রাজ্যসভায় যে বিজেপি বা এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, আগামী চার বছরে সেটা হওয়ার আশাও নেই, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তো তা ভালই জানতেন। তবু জমি অধিগ্রহণ আইনের সংশোধনী নিয়ে কেন তাঁরা এতটা গোঁয়ার্তুমি করতে গেলেন? উত্তর সম্ভবত একটাই: অত্যধিক আত্মপ্রত্যয়।

যশবন্ত সিন্হা বা অরুণ শৌরি কেন এই মুহূর্তে এতটা বিক্ষুব্ধ, বুঝতে অসুবিধে হয় না। ভারতের দ্বিতীয় রিপাবলিকের মহান নেতাকে নিয়ে তাঁরা আগে যে পরিমাণ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন, তাতে তাঁদের বিরক্ত হওয়ার একশো একটা কারণ আছে! তবে কিনা, এখানেই সমস্যার শেষ নয়। অনেকেই মনে করেন, একটা জায়গায় সরকার গভীর ভাবে ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত খনিজ তেলের দাম হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি এক বিন্দুও কমানো যায়নি। পরিস্থিতির সুবিধে নেওয়া যায়নি।

মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘কর সন্ত্রাস’-এর অবসান ঘটাবেন। যে এফআইআই বা বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা এ আশ্বাসে ভরসা করেছিলেন তাঁরা আবিষ্কার করলেন, মোদী সরকার তাঁদের লাভের উপর ন্যূনতম বিকল্প কর (মিনিমাম অলটারনেটিভ ট্যাক্স বা ‘ম্যাট’) বসাচ্ছে। তার পরে অবশ্য অর্থ মন্ত্রক আবার ডিগবাজি খেয়ে জানিয়ে দেয়, সিঙ্গাপুর বা মরিশাসের মতো করমুক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের উপর এই কর বসানো হবে না। এ-সবের ফলে এফআইআই-এর পালে হাওয়া কিছুটা পড়ে গেছে।

সত্যি বলতে কী, পূর্বসূরির সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী কিন্তু তাঁর পদের ভূমিকায় যথেষ্ট এনার্জি আনতে পেরেছেন, নিজের ব্যক্তিত্বের মধ্যে দিয়ে একটা উদ্যম সঞ্চার করতে পেরেছেন। অবশ্য এই এনার্জির অনেকটাই যাচ্ছে বিদেশ নীতিতে। নিজের ‘বিশ্বনেতা’ ইমেজ নির্মাণের অভিমুখে। কেন তিনি এ নিয়ে এতখানি উৎসুক, সেটা বোঝাই যায়। ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার পর তাঁর বিশ্বময় দুর্নাম রটেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ভিসা দিতে পর্যন্ত অস্বীকার করেছিল।

নির্বাচনী প্রচারের সময়ে মোদী তাঁর ‘গুজরাত উন্নয়ন মডেল’ দিয়ে বহু ভোটারকে কাছে টানতে পেরেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ আর বিহারে অনেকেই ভেবেছিলেন, গুজরাত প্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেবল নিজের রাজ্য থেকে আমলা আমদানি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মযজ্ঞে সাফল্য আনা যায় কি? যাঁরা তাঁকে ক্ষমতায় এনেছেন তাঁদের বল্গাছাড়া আশা মেটানো যায় কি? এই সরকারের প্রধান প্রবণতা, যে করে হোক টার্গেট-এ পৌঁছতে হবে। প্রশাসনে মান উন্নয়নের প্রচেষ্টাটা তুলনায় কম। দুটো উদাহরণ। ‘জন ধন যোজনা’য় যে সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তার সব কয়টিতে টাকা দেওয়া যায়নি। দুই, ‘স্বচ্ছ ভারত’ কার্যক্রমে মেয়েদের জন্য শৌচাগার তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেগুলি যথেষ্ট পরিষ্কার, ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়নি।

মোদীর সমর্থকরা বলবেন, তিনি কাজের মানুষ, টেকনোক্র্যাট, অকর্মা প্রশাসনিক কর্তাদের দিয়েও কাজ করিয়ে নিতে জানেন। এ বিষয়ে সংশয় নেই যে গত এক বছরে বড় কোনও দুর্নীতির নামও শোনা যায়নি। কিন্তু প্রশাসনিক দক্ষতা? ‘সরকার ছোট, প্রশাসন বড়’ কথাটা বলতে সহজ, কাজে পরিণত করতে তত সহজ নয়। মোদী জানেন, দুর্বল পরিকাঠামো মেরামত করতে বৃহৎ লগ্নির বিকল্প নেই। তবে তার জন্য ব্যাঙ্কগুলির বড় অঙ্কের ফান্ড দরকার। সমর্থকরা বলেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে জানেন মোদী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। (পশ্চিমবঙ্গে এর মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে তাঁকে!) তাঁরা ঠিক বলেন কি? পরের চার বছরে কি তাঁর মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখব আমরা? না কি একই ভুল, একই দুর্বলতা বার বার দেখতে থাকব?

Featured Book: As Author
Gas Wars
Crony Capitalism and the Ambanis
Also available:
 
Documentary: Featured
Featured Book: As Publisher
Corruption, CBI and I
More than Memoirs of a Veteran Scam-Buster
  • Authorship: Shantonu Sen with Sanjukta Basu
  • Publisher: Paranjoy Guha Thakurta
  • 260 pages
  • Published month:
  • Buy from Amazon