দেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল মোদি ৩.০ সরকারের বাজেট?

লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। কোনওমতে শরিক দলের সমর্থনে সরকার গড়তে পেরেছে তারা। তৃতীয়বার দেশের শাসকের কুর্সিতে বসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম বাজেট ছিল মঙ্গলবার। আর কার্যত সেই বাজেট ঘোষণাতে মোদি সরকার স্বীকার করে নিয়েছে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেশ সবচেয়ে বড় যে অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে যুঝছে, তা হল চাকরি।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে মোদি সরকারের অবস্থা যে এহেন শোচনীয়, এমনটা অবশ্য তারা মানতে নারাজ। বাজেট ঘোষণার সময় তেমন ইঙ্গিতই মিলল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছ থেকে। এদিকে বিরোধী দল কংগ্রেসের দাবি, তাদের প্রাক-নির্বাচনী ইস্তেহার থেকে কয়েকটি পাতা চুরি করেছে বিজেপি সরকার। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প বা ঘোষণার কথা রয়েছে কংগ্রেসের ইস্তেহারে। দেশের শীর্ষ সংস্থাগুলিতে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম, এমপ্লয়মেন্ট লিঙ্কড ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম কিংবা বিনিয়োগকে আরও উৎসাহ জোগাতে 'অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স' বাতিল বা মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (MNREGA) বাস্তবায়নের খাতে বাজেট বরাদ্দ না কমানোর মতো সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের ইস্তেহার থেকেই অনুপ্রাণিত বলে দাবি করা হয়েছে কংগ্রেসের তরফে।

নয়া বাজেটে মধ্যবিত্তর জন্য আয়কর কাঠামোয় সামান্য রদবদল এনেছে কেন্দ্র সরকার। যাঁদের আয় ৬ লক্ষ টাকার বেশি এবং ৭ লক্ষ টাকার কম, তাঁদের আয়কর কমে ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। যাঁদের রোজগার ১০ লক্ষ টাকার উপরে, তাঁদের আয়কর নেমে এসেছে ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের দাবি, নয়া করকাঠামোয় এই আয়ের শ্রেণিভুক্ত চাকুরিজীবীরা অন্তত ১৭,৫০০ টাকা আয়কর বাঁচাতে পারবেন। লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২.৫ শতাংশ করা হলেও সেই ঘোষণা আদতেই খুশি করতে পারেনি সম্পত্তির মালিকদের। কারণ কর কমালেও সম্পত্তির সূচক সুবিধা (প্রপার্টি ইনডেক্সশন) সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা তাঁদের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগের।

প্রত্যাশা অনুযায়ীই বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশ— এই দুটি রাজ্যের জন্যই মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা ছিল মোদি থুড়ি এনডিএ সরকারের বাজেটে। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খণ্ডের কপালে কার্যত কিছুই জোটেনি। মনে রাখার বিষয়, এই তিন রাজ্যেই কিন্তু চলতি বছরেই বিধানসভা ভোট।

সোমবারের আর্থিক সমীক্ষা সামনে আসার পর থেকেই ২০২৪ সালের পূর্ণাঙ্গ বাজেট ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে যায়। যার প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শেয়ার বাজার ছিল উর্ধ্বগামী। কিন্তু নির্মলা সীতারমনের বাজেট ঘোষণা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ল শেয়ার বাজার। নির্মলার একাধিক ঘোষণায় এদিন কমতে শুরু করে শেয়ার সূচক। পড়ে যায় সেনসেক্স থেকে নিফটি। স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভের উপর করবৃদ্ধি (১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশ), দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভের উপর কর বাড়ানো (১০ শতাংশ থেকে ১২.৫ শতাংশ), সিকিওরিটিজ লেনদেনের উপর করবৃদ্ধি (০.২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ), সম্পত্তি রিক্ল্যাসিফিকেশনের সময় পরিবর্তন, ফিউচার অ্যান্ড অপশন (F&Q)-এর লেনদেনের উপরে করবৃদ্ধি এবং শেয়ার বাইব্যাকের মাধ্যমে আয়ের উপরেও কর বাড়ানোর মতো একাধিক সিদ্ধান্তই শেয়ার বাজারে ধসের জন্য দায়ী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

তবে রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে এই মুহূর্তে সরকারের বিশেষ মাথাব্যথার কারণ নেই। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিন্দুক থেকে সরকারি কোষাগারে আসতে চলেছে অবিশ্বাস্য অঙ্কের অর্থ। জানা গিয়েছে, প্রায় ২.১ লক্ষ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড হিসেবে নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব খাতে আয় এই অর্থবর্ষে বেড়েছে ১৪.৫%, যেখানে খরচ বেড়েছে মাত্র ৫.৯৪%। এদিকে এই রাজস্ব খাতে বর্ধিত আয় কিন্তু কোনও রকম প্রকল্প বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে খরচ করা হয়নি। বরং তা দিয়ে রাজস্বঘাটতিই কমানো হয়েছে খানিক। গত অর্থবর্ষে যা ছিল জিডিপির ৫.৮%, এই অর্থবর্ষে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪.৯ শতাংশে।

দেশের পূর্বাঞ্চলের জন্য 'পূর্বদয়া' নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে কেন্দ্র সরকার। যার আওতায় বিহারের পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলিও রয়েছে। যার জন্য মোট ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র।

স্বাভাবিক ভাবেই এই বাজেটের অ্যাজেন্ডায় কর্মসংস্থান তৈরির ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। যদিও নির্মলা সীতারমন একবারও MNREGA প্রকল্পের নাম এদিনের বাজেট ভাষণে নেননি। তবে কার্যত স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন, দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে গরিব মানুষের অনেকটাই সহায়তা করেছে এই প্রকল্পই। যদিও কংগ্রেসের কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে এই প্রকল্পকে ২০১৫ সালে বাতিল করে দেয় মোদি সরকার। অথচ দেখা গিয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে রেকর্ড পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। দেখা গিয়েছে গত অর্থবর্ষেও কিন্তু একই পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছিল এই প্রকল্পের পিছনে। যদিও অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, MNREGA-র খরচ দিয়ে দেশের গ্রামীণ পরিস্থিতি পরিষ্কার করে বোঝা সম্ভব নয়। কারণ MNREGA ছাড়াও প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব গ্রামীণ প্রকল্প রয়েছে। সেই খাতে আলাদা আলাদা বরাদ্দ রয়েছে। তার উপর গ্রামীণ ভারতের অবস্থা অনেকটাই নির্ভর করে।

অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য এই বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র, যার বড় অংশ খরচ হবে রাজ্যের নতুন রাজধানী অমরাবতীকে সাজানোর কাজে। কেন্দ্রের এই ঘোষণা এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে কতটা শান্ত করে সেটা অবশ্য দেখার।

পঞ্চাশটির কাছাকাছি আমদানিকৃত জিনিসপত্রের উপর শুল্ক কমানো এবং সেই শুল্কের প্রতিশ্রুতি ছ'মাসের মধ্যে পর্যালোচনার আশ্বাস মিলেছে বাজেটে। যে সিদ্ধান্তকে বহু অর্থনীতিবিদই ভারতীয় শিল্পের সুরক্ষার পক্ষে ক্ষতিকারক হিসেবে দেখছেন। এমনকী একে একধরনের 'কোর্স কারেকশন' হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁরা। যদিও আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহের সরকারি প্রকল্পটি চালু থাকবে, তা সত্ত্বেও খাদ্যে ভর্তুকির খাতে ব্যয় অনেকটাই কমিয়ে ফেলেছে সরকার। কারণ আগের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ গম ও ধান কিনছে তারা এই মুহূর্তে।

শাসকদল দেরিতে হলেও স্বীকার করে নিয়েছে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কর্মসংস্থানের অভাব দেশের যুব সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE) অনুসারে, ২০২২-২৩ সালে ৪৫.৪ শতাংশে পৌঁছেছে যুবসম্প্রদায়ের বেকারত্ব। যা রেকর্ড বেশি। ২০১১-১৩ থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক সংখ্যক পুরুষ এবং দুই তৃতীয়াংশের বেশি মহিলাকে 'স্বনির্ভর' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বেকার শব্দটির থেকে 'স্বনির্ভর' শব্দটি শুনতে যে ভালো, তা কে না জানে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত, তাড়াহুড়ো করে পণ্য পরিষেবা কর (GST) চালু করা (২০১৭ সাল থেকে যার নিয়মে ৯০০ বারেরও বেশি সংশোধন করা হয়েছে) এবং করোনা অতিমারির পর কঠোর লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তের দরুণ দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাকরিহারা হয়েছেন অজস্র মানুষ।

অসংগঠিত উদ্যোগ সংক্রান্ত সরকারের বাৎসরিক সমীক্ষা বলছে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ২৪ লক্ষ ছোট ইউনিটে তালা পড়েছে। যার ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রে অন্তত ১.৩ কোটি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সম্প্রতি আরবিআই দাবি করেছে, গত ৩-৪ বছরে ৮ কোটি চাকরি তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। তবে সেই দাবি কতটা সঠিক, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ২০২৪ সালের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে জানানো হয়েছে, দেশের পাঁচশোটিরও বেশি সংস্থাকে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যাতে দেশের এক কোটি যুবক-যুবতীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়। তার জন্য মাসে ৫০০০ টাকা করে ইন্টার্নশিপ ভাতা ও এককালীন সহায়তা হিসেবে ৬০০০ টাকা করে দেবে সরকার। ওইসব ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণের খরচ বহন করবে সংস্থাগুলি, তার জন্য ইন্টার্নশিপ ভাতার ১০ শতাংশ (প্রতি মাসে ৫০০ টাকা) করমুক্ত CSR (corporate social responsibility) তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে এমপ্লয়মেন্ট-লিঙ্কড ইনসেনটিভ প্রকল্পগুলির সুবিধা পাবেন ২.১ কোটি যুবক-যুবতী। এরই সঙ্গে employees’ provident fund organization (EPFO)-তেও সরকারের তরফে সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে।

২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট শোনার পর অবশ্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে ভোলেননি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর দাবি, তিনি খুশি যে দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কংগ্রেসের ইস্তেহারটি পড়েছেন এবং কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে তাদের কিছু পরামর্শ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়িত করেছেন। যদিও অর্থমন্ত্রী নির্মলা এর আগে কংগ্রেসের ওই ইস্তেহারটি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছিলেন, তাতে যে সুপারিশগুলি রয়েছে তার বাস্তবায়ন আদতে সম্ভব নয়। কারণ সেগুলি যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ এবং তা রাজস্ব ঘাটতিই বাড়াবে আখেরে।

সীতারমনের বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করা হয়েছে, কৃষিখাতে অন্তত ১,৫২ কোটি ব্যয় করবে সরকার। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কে অবশ্য কোনও ঘোষণা করা হয়নি বাজেটে। এদিকে কৃষক ইউনিয়নগুলির দাবি, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে সরকারের বরাদ্দ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, এবং বর্তমানে তা মোট বাজেটের ৩.১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে এই প্রথম বার নির্মলার ৫৮ পৃষ্ঠার দীর্ঘ বাজেট ভাষণে 'রেলওয়ে, 'প্রতিরক্ষা' এবং 'স্বাস্থ্য পরিষেবা'— এই তিনটি শব্দের কোনও উল্লেখ ছিল না।

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়লেও প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট এবার কমিয়ে আনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলার বাজেট ভাষণে প্রায় না-থাকার মতোই ছিল স্বাস্থ্যপরিষেবার প্রসঙ্গটি। প্রতিবারের মতোই এই বাজেটও মোড়া রইল শুধু তথ্য নিয়ে খেলাধুলা ও ইচ্ছাপূরণের চিন্তাভাবনা দিয়েই। এই বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছে ১০.৫ শতাংশ। যেখানে বাস্তবে তা ৬.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে বাড়তে পারে বলেই অনুমান করা হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৯.৪ শতাংশ। যাকে হিসেবের মধ্যেই ধরছে না সরকার। বরং মূল মুদ্রাস্ফিতির হার (খাদ্যপণ্য ও জ্বালানিশক্তি বাদ দিয়ে যে মূল্যবৃদ্ধি, তাকেই বলে কোর ইনফ্লেশন রেট বা মূল মুদ্রাস্ফিতির হার)-কে ৩ শতাংশ ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির অঙ্ক কষছে কেন্দ্র। সম্প্রতি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী)-র তরফে একটি সাংবাদিক বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রের এই কারচুপির কথা সামনে আনা হয়েছে।

দেরিতে হলেও যে কেন্দ্র সরকার কর্মসংস্থান তৈরির গুরুত্ব বুঝেছে এবং বিষয়টি বাজেটে জায়গা পেয়েছে, সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতেই হয়। তবে তার শুরুটা কিন্তু সরকারের নিজের ঘর থেকেই হতে পারে। ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (DoPT)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ২.২ কোটি আবেদনকারী কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে সফলভাবে নিয়োগ হয়েছে মাত্র ৭.২২ লক্ষ শূন্যপদে। সেই হিসেবে বললে ভুল হবে না, প্রতি ১ হাজার জন আবেদনকারির মধ্যে চাকরি পেয়েছেন মাত্র ৩ জন। সম্প্রতি সিটিব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, অর্থনীতির সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং করোনা অতিমারি পরবর্তী পর্বে সেই কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ আরও কমেছে। পাশাপাশি উৎপাদন শিল্পেও কর্মসংস্থান তৈরির হারও কমেছে, একই সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শ্রমিকের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (ILO)-র ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট জানাচ্ছে, পরিকাঠামোগত সংস্কার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে দেশে।

২০২০ সালের মার্চ মাসের লকডাউনের জেরে প্রথমবার ভারতের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছিল। এতদিন গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে শহরে যেতেন মানুষ। কিন্তু লকডাউনের জেরে মানুষ শহর থেকে গ্রামের দিকে হাঁটতে লাগলেন। যার প্রভাব পড়ল ভারতীয় অর্থনীতিতেও। শুধু পড়লই না, তার দীর্ঘমেয়াদি ফল ভুগল দেশের অর্থনীতি। নয়া বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রস্তাব আনা হল, তাতে যে প্রচুর সংখ্যক চাকরির সুযোগ বাড়বে এমনটা সংশয়হীন ভাবে বলা যায় না। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উৎসাহ জোগানো নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ না হলে এবং সাধারণ মানুষের খরচ করার ক্ষমতা (২০ বছরে যা সর্বনিম্ন) যদি না বাড়ানো যায়, তা হলে কর্মসংস্থান আপনাআপনি তৈরি হবে না। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বিত্তশালীদের হাতে সীমাবদ্ধ না থেকে সকলের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করা জরুরি। বিশেষত ভারতের মতো দেশে তো বটেই, যেখানে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশেরই দৈনিক রোজগার একশো টাকারও নীচে।

ঢের পথ হাঁটা বাকি আমাদের।

(সৌজন্য- ফ্রি প্রেস জার্নাল)

Featured Book: As Author
Gas Wars
Crony Capitalism and the Ambanis
Also available:
 
Documentary: Featured
Featured Book: As Publisher
Sue the Messenger
How legal harassment by corporates is shackling reportage and undermining democracy in India