ভোট-ফলে চমকের পঞ্চবাণ

লখনউয়ের মসনদে যোগী আদিত্যনাথের ফিরে আসা। আরও তিন রাজ্যে (উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়া) বিজেপির দাপুটে জয়। এবং অবশ্যই পঞ্জাবে আপ-ঝড়। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা হয়েছে বিস্তর। আগামি কয়েক দিনও তা জারি থাকার সম্ভাবনা। তাই কোন রাজ্যে কে কত আসনে জয়ী কিংবা কোথায় কোন দল সরকার গড়তে চলেছে, সেই সমস্ত কথা ফের তুলে ধরে এই লেখার ভার বাড়াতে চাই না। তার থেকে এখানে বরং আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি এমন পাঁচটি বিষয়, যা আমাদের অনেককে চমকে দিয়েছে। হ্যাঁ, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমাকেও।  

এক, তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চাষিদের আন্দোলন যে রকম ঘোরালো হয়ে উঠেছিল, তাতে তার খেসারত উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে দিতে হবে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। বিশেষত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। ১৯ নভেম্বর যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই আইন ফেরালেন, ক্ষমা চাইলেন, তখনও কিন্তু তিনি ভুল স্বীকার করেননি। বরং বলেছিলেন, এর সুবিধা চাষিদের বোঝাতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু এ দিন আশ্চর্য হয়ে দেখতে হল, সেই কৃষক আন্দোলনের প্রভাব উত্তরপ্রদেশের ভোটে প্রায় পড়লই না! এমনকি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেও!

প্রধানমন্ত্রীর নিজের উদ্যোগে আইন ফিরিয়ে নেওয়া নিঃসন্দেহে গত আড়াই মাসে বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা জুগিয়েছে। কিন্তু তার পরেও আরএসএস, এমনকি বিজেপির ভিতরেও সংশয় ছিল যে, কৃষকদের ক্ষোভের ক্ষত শুধু আইন ফেরানোর মলমে সেরে উঠবে কি না। এ দিন দেখা গেল, সেই ক্ষত অন্তত ব্যালটবাক্সে তেমন প্রভাব ফেলেনি।  

দুই, ফের সেই উত্তরপ্রদেশ। কংগ্রেস জনসংখ্যার বিচারে দেশের বৃহত্তম এই রাজ্যে তিন শতাংশ ভোটও পায়নি। গত বারের থেকে ৫টি আসন খুইয়েছে। তার বদলে ভোটের তীব্র মেরুকরণ হয়েছে। এক দিকে, বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ। আর অন্য দিকে, এসপি-আরএলডি জোট। দু’পক্ষেরই প্রাপ্ত ভোটের অংশীদারি বেড়েছে। বিজেপির ৩-৩.৫ শতাংশ, এসপি-র ১০ শতাংশের আশেপাশে। গত বারের তুলনায় ৪৯-৫০টি আসন বিজেপির কমেছে। ৭০-৭৩টির মতো বেড়েছে এসপি-র। বিজেপির যে আসন সংখ্যা গতবার ছিল, সেখান থেকে এ বার হারলে, তা আশ্চর্য হত। তা হয়নি। বরং ৫০-এর দশকের গোবিন্দবল্লভ পন্থের পরে এই প্রথম উত্তরপ্রদেশে পুরো পাঁচ বছর ‘রাজত্ব’ করার পরে ক্ষমতায় ফিরছেন কোনও মুখ্যমন্ত্রী। যোগী সরকারের বিরুদ্ধে কোভিড-মোকাবিলায় ব্যর্থতা, অক্সিজেন সঙ্কট, গঙ্গায় মৃতদেহের সারি দেখা যাওয়ার অভিযোগ ছিল। কৃষক আন্দোলন এবং সেই সূত্রে লখিমপুর খেরির মৃত্যু, উন্নাও-হাথরসের মতো বিতর্ক ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন অনায়াস জয় হাসিল করা চমকে দিয়েছে অনেককে।

তিন, মায়াবতীর বিএসপি যে বিজেপির বি-টিম, তা শোনা গিয়েছে বারবার। কিন্তু এ বার তারা বিজেপির জয়ে যে ভাবে সাহায্য করেছে, তা এক কথায় অসাধারণ, চমকপ্রদও। মায়াবতীর দল গত বারের থেকেও ১৮টি আসন খুইয়েছে। হাতি-চিহ্নে এ বার যাঁরা ভোট দিয়েছেন, খুব কম করে ৭০টি বিধানসভা আসনে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছেন তাঁরা। বিরোধী শিবিরের ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছে বিজেপি।

চার, পঞ্জাবে যে জনমত এ বার আপ-এর পক্ষে রয়েছে, তার আগাম আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু পঞ্চনদীর মুলুকে যে ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল পেয়েছে, তাতে ওরা নিজেরাও আশ্চর্য। কংগ্রেস ওই রাজ্যে নিজেদের পায়ে ক্রমাগত কুড়ুল মেরে গিয়েছে। কিন্তু তা বলে তাদের সেখানে এমন দুরবস্থা হবে, তা ভাবা যায়নি। দিল্লির বাইরে আপ-এর পা রাখা এ বার প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এই মাপের জয় আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো। 

পাঁচ, একের পর এক ভোটে হার থেকে স্পষ্ট যে, কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হয়ে চলেছে। প্রায় প্রতি বার তারা যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে, তাতে এই পরাজয় আশ্চর্যের নয়। কিন্তু চমকে উঠতে হচ্ছে তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আট বছর আগে কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা বলেছিলেন মোদী। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আরও দু’বছর পরে যখন লোকসভা ভোট হবে, তখন কংগ্রেসকে খুঁজে পাওয়া যাবে তো? 

পাঁচ চমক আর আশ্চর্যের কথা বললাম। এ বার একটা পূর্বাভাস দিয়ে শেষ করি। এখনও দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি, তাতে কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট গঠন অসম্ভব। কারণ, বিজেপি ছাড়া এখনও তারাই একমাত্র সর্বভারতীয় দল। কিন্তু যে গতিতে তারা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে, তাতে দ্রুত তাদের কড়া আত্মসমীক্ষা জরুরি। আমার মতে, সামনের দু’বছরে কংগ্রেস নিজেদের অহঙ্কার ভুলে ছোট, আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট না করলে, মোদীর তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভবত স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

Featured Book: As Author
Loose Pages
Court Cases That Could Have Shaken India
  • Authorship: Co-authored with Sourya Majumder
  • Publisher: Paranjoy
  • 376 pages
  • Published month:
  • Buy from Amazon
 
Documentary: Featured
Featured Book: As Publisher
Netaji
Living Dangerously