সাংসদ মহুয়া মৈত্র। একজন সুবক্তা, আত্মসচেতন, স্বাধীনচেতা মহিলা। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে
কৃষ্ণনগর লোকসভা থেকে নির্বাচিত। যিনি বরাবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট-বন্ধু গৌতম আদানির বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা সমালোচনা করে থাকেন।
ইদানিং মহুয়া একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। সাংসদ এবং তাঁর আইনজীবী, যিনি মহুয়ার প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডও বটে, এই দু'জনের মধ্যে একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। এমনকি পোষ্য রট উইলার কার হেফাজতে থাকবে তা নিয়েও ঝামেলায় জড়ান দু'জন।
এই কাহিনির কুশীলবের তালিকায় আরও একটি নাম নিশিকান্ত দুবে। ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ। যিনি মহুয়ার বিরুদ্ধে সরব। দুবের অভিযোগ, সংসদের নিয়ম-নীতির কোনও তোয়াক্কা করেন না তৃণমূল সাংসদ। পালটা মহুয়া আবার নিশিকান্ত দুবের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
আর এক কুশীলব, রিয়েল এস্টেট জগতের অন্য়তম মুখ দর্শন হীরানন্দানি। হিরানন্দানি আবার আদানির প্রতিপক্ষ বলেও পরিচিত। হিরানন্দানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে মহুয়ার সংসদীয় ই-মেল অ্যাকাউন্ট এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন তিনি। একজন সাংসদের প্রশ্ন করার যে অধিকার রয়েছে, তা মহুয়ার হয়ে আসলে ওই রিয়েল এস্টেট কর্নধার করেছেন। বদলে মহুয়া পেয়েছেন টাকা আর প্রচুর উপঢৌকন।
নাটকীয় এই সোপ-অপেরার এরাই মূল চরিত্র। আমাদের আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই নাটকের সংলাপ বা ঘটনাক্রম কিন্তু কোনও চিত্রনাট্যকার লেখেননি। এতে কোনও মনগড়া কাহিনি নেই। যা আছে, তা হল বাস্তবের উপর ভিত্তি করে পাওয়া নির্দিষ্ট তথ্য-পরিসংখ্যান। আর তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে জটিল টানাপড়েন। যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খবরের কাগজের হেডলাইন, টিভি শোয়ে বিতর্কের ইস্যু।
আরও পড়ুন: টাকার বিনিময়ে আদানি-দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন! মহুয়া বিতর্কে কেন চুপ তৃণমূল?
আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে এর আগে বহুবার মুখ খুলেছেন মহুয়া মৈত্র। নরেন্দ্র মোদির সরকার কেন আদানির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত করছে না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিতর্কের মধ্যে মহুয়া এ'বার নিজেই কেলেঙ্কারির ক্রসফায়ারে ফেঁসে গিয়েছেন। যে টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছেন একাধিক রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি এবং আইনজীবী।
গোড্ডা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত নিশিকান্ত দুবে। বিজেপি সাংসদ। মহুয়ার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ এনেছেন তিনি। 'আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তোলার বদলে ঘুষ নিয়েছেন মহুয়া।' নিশিকান্ত দুবের এই অভিযোগের পরেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় পড়ে যায়। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্তের গোড্ডা কেন্দ্রটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যে পড়ে। আর এই ঝাড়খণ্ডের একটি বিদ্যুৎপ্রকল্প থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করে থাকে আদানি গোষ্ঠী।
মহুয়া মৈত্র ব্যাঙ্কিং সেক্টর ছেড়ে রাজনীতি বেছে নিয়েছেন। ২০১৯ সালে নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে সংসদে গিয়েছেন। নিশিকান্ত দুবের তোলা অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়েছেন মহুয়া। শুধু তাই নয়, কোনও রকম চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি তো বটেই আদানি গোষ্ঠীর সমালোচনা থেকেও হাত গুটিয়ে নেননি।
২০ অক্টোবর মহুয়া তাঁর এক্স হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি পোস্ট করেন। মহুয়া লেখেন, শান্তিতে থাকার জন্য আমি ৬ মাস চুপ করে মুখ বন্ধ রাখতে পারছি না। দুঃখিত মিস্টার আদানি আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি হইনি। একই রকম ভাবে দ্বিতীয় প্রস্তাবও ফিরিয়েছি, যেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলব না, শুধু আপনার সমালোচনা করতে পারব। আদানি টাকার বিনিময়ে চুপ থাকতে বলেছিলেন। আর এখন টাকার বদলে প্রশ্ন করার মিথ্যে মামলা সাজাচ্ছেন আমার বিরুদ্ধে।'
বিরোধিতার ঝাঁঝ বাড়াতে ফাইনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত একটি তদন্তমূলক রিপোর্টের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মহুয়া। যে রিপোর্টে আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে কয়লা কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। আবারও এক্স হ্যান্ডেল থেকে মহুয়ার পোস্ট। ঠিক পরের দিন। অর্থাৎ ২১ অক্টোবর, ২০২৩।
মহুয়া লেখেন, 'আমার বিরুদ্ধে সিবিআই অভিযানের খবর পাচ্ছি। এখন দুর্গাপুজোয় ব্যস্ত আছি। সিবিআইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ করছি। সিবিআই আসুক, এসে আমার ক'জোড়া জুতো আছে গুনুক। কিন্তু তার আগে আদানি কয়লা আমদানির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের যে ১৩ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছেন তার বিরুদ্ধে এফআইআর করুক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।'
মহুয়ার বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির অভিযোগ
তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ তোলেন নিশিকান্ত দুবে। যাঁর সঙ্গে মহুয়ার সম্পর্ক, যাকে বলে একেবারে আদায় কাঁচকলায়। ১৫ অক্টোবর লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে একটি চিঠি লেখেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত। তাঁর চিঠি মহুয়ার বিরুদ্ধে। নিশিকান্ত লেখেন, 'সংসদে প্রশ্ন করার জন্য় মহুয়া একটি শিল্পগোষ্ঠী থেকে টাকা নিয়ে অন্য একটি শিল্পগোষ্ঠীকে টার্গেট করছেন।' দুবের অভিযোগ, 'টাকা এবং দামি উপহারের বিনিময়ে মহুয়া দুবাই-কেন্দ্রিক শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখতে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন। হীরানন্দানিকে ব্যবসায়িক সুবিধা পেতে সাংসদ পদের অধিকারকে অবৈধ ভাবে কাজে লাগিয়েছেন।'
নিশিকান্ত দুবের তিন পাতার চিঠিতে একমাত্র আদানি শিল্পগোষ্ঠীর উল্লেখ ছিল। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে চিঠিতে দু'বার আদানি গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করেন নিশিকান্ত দুবে। একইসঙ্গে মহুয়া কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জড়িয়ে শিল্পপতি গৌতম আদানিকে টার্গেট করছেন, চিঠিতে তাও লেখেন বিজেপি সাংসদ। দুবের এই অভিযোগের সোর্স এক আইনজীবী। নাম জয় অনন্ত দেহাদরাই। মহুয়া মৈত্রের প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড। অনন্ত গবেষণা করে, তথ্য ঘেঁটে মহুয়ার বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। সেই তদন্ত রিপোর্ট অনন্ত নিশিকান্ত দুবের কাছে পৌঁছে দেন। একটি কপি পৌঁছে দেন সিবিআইয়ের হাতে। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, 'সংসদে তোলা ৬১ প্রশ্নের মধ্য়ে ৫০ প্ৰশ্নই করা হয়েছে ব্যবসায়ী হীরানন্দানির ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য।' হীরানন্দানি গোষ্ঠী দেশের অন্যতম নির্মাণকারী সংস্থা। যারা মুম্বই এবং দেশের অন্যন্য শহরে টাউনশিপ বানিয়ে থাকে।
দুবের অভিযোগ, 'মহুয়ার প্রশ্নের অভিমুখ বেশিরভাগ সময়েই ছিল আদানি গোষ্ঠীর দিকে। সঙ্গে আরও জুড়ে যায় আরও একটি সংস্থার নাম, হীরানন্দানি গোষ্ঠী। যারা ব্যবসায়ীক দিক থেকে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই মহুয়া একের পর এক আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন। এখানেই শেষ নয়, গত কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছে। মহুয়া মৈত্র যখন বিরোধী নেত্রী, সে সময় প্রবলভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সম্মানীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে টার্গেট করে গিয়েছেন। বারবার আদানি গোষ্ঠীর প্রসঙ্গ টেনে এনে নিজেকে সরকারের সমালোচক হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে গিয়েছেন।
আসলে মহুয়া সম্ভবত তাঁর গোপন অপরাধ ধামাচাপা দিতেই এই পথ বেছে নেন।' গোড্ডার বিজেপি নিশিকান্ত দুবে বলেন, 'এই গোটা এপিসোড ২০০৫ সালের ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। যে বছর ডিসেম্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরা ব্যক্তিগত স্বার্থে ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন।' সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি তৈরির দাবি করেন নিশিকান্ত দুবে। একইসঙ্গে লোকসভা থেকে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের দাবি রাখেন।
রঙ্গমঞ্চে আদানির প্রবেশ
সুযোগ বুঝে মহুয়া-নিশিকান্ত-র এই অভিযোগ পালটা যুক্তির যুদ্ধে নেমে পড়ে আদানি গোষ্ঠী। আসরে নেমেই ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে চলতি ঘটনাক্রম নিয়ে তাদের বিবৃতি প্রকাশ করে আদানি গোষ্ঠী। বলা হয়, 'কয়েকটি গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ আদানি গোষ্ঠীর নাম খারাপ করতে, বাজারে সুনাম নষ্ট করতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে।' একইসঙ্গে বলা হয়, 'আদানি গোষ্ঠী এবং সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম আদানির প্রতিপত্তি, সুনাম, সুখ্যাতি নষ্ট করতে ২০১৮ সাল থেকেই এই চেষ্টা চলছে।'
৯ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে আদানি গোষ্ঠী সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেই বিবৃতির কথাও টেনে আনা হয়। কী বলা হয়েছিল সেই মিডিয়া বিবৃতিতে? 'বিদেশি কোনও কোনও শক্তি যেমন ওসিসিআর (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট), বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের একাংশ, শর্ট-সেলার (ব্রোকারেজে শেয়ার ধার নিয়ে যাঁরা কেনাবেচা করে থাকেন) এবং দেশের মধ্যে কয়েকটি সংস্থা পরস্পর হাত মিলিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে আসছে। যাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, যেন তেন প্রকারে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরের পতন। আদানি গোষ্ঠীর নাম খারাপ করতে, এই সমস্ত গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিরা পেশাদারদের দিয়ে এমন এক মেশিনারি তৈরি করেছে যা দেশ এবং দেশের বাইরে চূড়ান্ত সমন্বয় রেখে এক যোগে কাজ করছে। বিবৃতিতে 'প্লে-বুক'-এর কথা হয়। ('প্লে-বুক' মানে আদানির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে কোন কোন কৌশলে কী ভাবে পদক্ষেপ করতে হবে, তার খুঁটিনাটির কথা বলতে চেয়েছে আদানি গোষ্ঠী)
আদানি গোষ্ঠীর অভিযোগ, দেশের কোনও কোর্টে মামলার শুনানি থাকলে, মামলার তারিখের ঠিক আগে আগেই মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এটা 'প্লে-বুক'-এরই কৌশল। কয়লা আমদানি নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওভার-ইনভয়সিং-এর অভিযোগ ওঠে। সুপ্রিম কোর্টে আদানি গোষ্ঠীর একটি শুনানির ঠিক আগে ফাইনান্সিয়াল টাইমস্-এ কয়লার আমদানি দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। আদানি গোষ্ঠী সেই রিপোর্টকেই 'প্লে-বুক'-এর কৌশল হিসেবে হাতিয়ার করে।
বাজারে আদানি গোষ্ঠীর সুনাম খারাপ করতে পিছনে বিদেশি সংস্থার হাত রয়েছে বলা হয়। বিদেশি পুঁজির মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর বিবৃতি কোনও শব্দ খরচ করেনি। কেন মহুয়া মৈত্র হীরানন্দানির কাছে থেকে উপহার এবং টাকা নিয়ে লাগাতার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে টার্গেট করেন? বিবৃতিতে তার কোনও উত্তর নেই। এমনকি মহুয়া যে সংসদের ভিতরে-বাইরে বারবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, সেই সমস্ত অভিযোগ খারিজ করতে এক লাইনও লেখা হয়নি, আদানি গোষ্ঠীর বিবৃতিতে।
আদানিকে মহুয়ার প্রশ্ন
'নিউজলন্ড্রি' ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আজকের তারিখ পর্যন্ত, মহুয়া এ'পর্যন্ত ৬২ প্রশ্ন সংসদে করেছেন। এর মধ্যে ৯টি প্রশ্ন আদানি গোষ্ঠীকে জড়িয়ে। একটি প্রশ্নে সরাসরি হীরানন্দানি গোষ্ঠীর উল্লেখ রয়েছে। আদানি গোষ্ঠীকে জড়িয়ে যে পাঁচ প্রশ্ন, সে'গুলি ওডিশার বঙ্গোপসাগর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন টার্মিনাল সংক্রান্ত। এই গ্যাস টার্মিনাল ওডিশা ভদ্রক জেলার অন্তর্গত ধমরা বন্দরের মধ্যে পড়ে। বন্দরটি আদানি গোষ্ঠীর।
সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মহুয়া মৈত্রের প্রথম প্রশ্ন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রককে। প্রশ্ন ছিল, 'কেন্দ্র সরকারের নিজস্ব সংস্থা গেইল (GAIL) পারাদীপ বন্দরের স্টোরেজ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কি না?' পারাদীপ ও ধমরা বন্দর দু'টোই অবস্থান গত দিক থেকে কাছাকাছি। ওই একই প্রশ্নতে মহুয়া জিজ্ঞেসকরেন,'গেইল (GAIL)এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর (IOCL)মত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি কোনও সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে, যথাক্রমে ৩৮ শতাংশ এবং ১১ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না? যে সংস্থা ওডিশার ধমরা বন্দরের মালিক।'
ওডিশা সরকারের কাছ থেকে ৩৪ বছরের লিজ নিয়ে ধমরা বন্দরটি যে সংস্থা চালায় তার একশো শতাংশের মালিক আদানি গোষ্ঠী। মহুয়ার প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রক বলে, 'পারাদীপে স্টোরেজ টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার। কেননা প্রায় একই ভৌগলিক অবস্থানে পাশাপাশি দুটি প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন টার্মিনাল আখেরে আর্থিক দিক থেকে লাভের হবে না।'
আরও পড়ুন: সমস্ত অভিযোগ মনগড়া! উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন বিতর্কে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন মহুয়া?
২০১৯ শীতকালীন অধিবেশন। ফের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সামনে প্রশ্ন রাখেন মহুয়া মৈত্র। জিজ্ঞেস করেন, 'ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (IOCL) এবং গেইল (GAIL) এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আদানির ধমরা প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনালের সঙ্গে কোনও টোলিং চুক্তি করেছে কি না? বছরে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক গ্যাসের বিনিময়ে প্রতি ইউনিট গ্যাস-এর (ম্যাট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) মূল্য ৬০ দশমিক ১৮ টাকায় স্থির হয়েছে কি না? একইসঙ্গে চুক্তিতে আগামী ২০ বছরের জন্য দরমূল্য প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে বৃদ্ধির ধারা রয়েছে কি না?'
মহুয়ার প্রশ্ন, 'রাষ্ট্রায়ত্ত দুই সংস্থা এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার যে চুক্তি, তা দরপত্র বিডিং করে প্রকৃত যে নিয়মাবলী, তার বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনও প্রযুক্তিগত বাণিজ্যিক সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে কি না?' কৃষ্ণনগরের সাংসদের প্রশ্ন, 'কোন যুক্তিতে, কেন আইওসিএল (IOCL) এবং গেইল (GAIL) সংস্থা করদাতাদের ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ধমরা এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পে? তাও আবার কোনও দরপত্রের বিডিং ছাড়াই? যার মাধ্যমে সরকার নিজের ঘরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা তুলতে পারত?' এই বিনিয়োগ নিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সরকারের ব্যাখ্যা দেয়।