রবিবার 17 নভেম্বর 2024
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা
২০১৯ সালে আদানির দিল্লির বাড়িতে একটি নৈশভোজ হয়েছিল। সেই নৈশভোজ ঘিরে আবারও চর্চায় আদানিরা। ওই নৈশভোজে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের কী-ফ্যাক্টর এনসিপির রুটম্যাপ নিয়ে নাকি বিশেষ আলোচনা হয়েছিল। এমনটা বলছেন মহারাষ্ট্রের বর্তমান উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার। নির্বাচন কমিশন বলেছে, অজিত পাওয়ারের এনসিপিই হচ্ছে আসল এনসিপি। একটি পোর্টালে প্রকাশিত শ্রীনিবাসন জৈনের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে অজিত পাওয়ার জানিয়েছেন, আদানির ওই নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন আদানি, অমিত শাহ এবং শরদ পাওয়ার অর্থাৎ অজিত পাওয়ারের কাকা। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ারের হাতেই মূল এনসিপির প্রতিষ্ঠা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কৃষি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নাকি খোদ আদানির দিল্লির বাসভবনে নৈশভোজে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেছেন যে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিকে তৎকালীন অবিভক্ত এনসিপি সমর্থন করবে কিনা!
সেই সময়ে অবশ্য এই নিয়ে আলোচনা ব্যর্থই হয়েছিল। দুই বছর পরে, ঠাকরের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন একটি নতুন সরকার মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাভার গ্রহণ করে। একনাথ শিণ্ডে (শিবসেনার বিদ্রোহী অংশ, যার নেতৃত্বে শিবসেনা টুকরো হয়ে যায়) মুখ্যমন্ত্রী হন এবং বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবীশ রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন। এর পরেই অজিত পাওয়ার যুগ্ম উপ মুখ্যমন্ত্রী হন।
অমিত শাহ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডান হাত। পাঁচ বছর আগে নয়াদিল্লির অভিজাত গল্ফ লিঙ্কস এলাকায় আদানির বাসভবনে একটি নৈশভোজে যেখানে তিনি উপস্থিত, সেখানে মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী আরও নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হওয়ার কথা৷ রাজ্যের ২৮৮ সদস্যের বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল এর তিন দিন পরে জানা যাবে৷ ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিরোধীরা ইতিমধ্যেই আদানির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে কারণ আদানিকে রাজ্যের রাজধানী মুম্বইতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম বস্তিগুলির মধ্যে অন্যতম, ধারাভি পুনর্গঠনের চুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে (শিবসেনা উদ্ধব শিবির) এবং সংসদের নিম্নকক্ষে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধি (কংগ্রেস) দুইজনেই বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে, ধারাভি পুনর্গঠনের চুক্তি মঞ্জুর করা হয়েছে। যদি মহা বিকাশ আঘাদি (MVA) জোট - যার মধ্যে আছে শিবসেনা, কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) অংশ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তাহলে আদানির হাত থেকে ওই চুক্তি সরিয়ে দেওয়া হবে।
পাঁচ বছর আগে নয়াদিল্লিতে ওই 'গোপন' নৈশভোজ হয়েছিল। হঠাৎ এখন তা নিয়ে এত আলোচনা কেন? শরদ পাওয়ার আদানির বাসভবনে এই নৈশভোজ ও বৈঠকের কথা কিন্তু অস্বীকার করেননি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নৈশভোজের বৈঠক ছিল। তিনি এতে যোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন কারণ নয়াদিল্লিতে বিজেপি সরকার এনসিপির সহকর্মীদের উপর 'মিথ্যা মামলা' চাপাচ্ছিল। এই নিয়ে তাঁরা চিন্তিত ছিলেন। ওই সহকর্মীরা বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন যে তাঁদের দল যদি বিজেপির সঙ্গ না দেয় তাহলে তাঁদের কোনও নিস্তার নেই।
শুধু এই নয়, শরদ পাওয়ার পাওয়ার আদানির সঙ্গে তাঁর নিজের দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও বলেছেন। যখন তাঁকে তেমন কেউই চিনত না সেই সময় থেকেই এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন শরদ। এই সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেস দলের প্রতিক্রিয়া, মোদির প্রতি বিরোধিতা, মহারাষ্ট্রে চলতে থাকা নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে বিশদে ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। ভাগ্নে অজিত পাওয়ারকে মূল এনসিপিতে ফেরানোর সম্ভাবনা নিয়েও সেই সাক্ষাৎকারে দীর্ঘ কথাবার্তা বলেছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের ঠিক আগে আগে অজিত পাওয়াত আদানির সঙ্গে নৈশভোজের যে বোমাটি ফাটিয়েছেন তাতে তিনি আবার কাকার দলের শাখায় ফিরে আসবেন কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্নই উঠছে। তবে আম্বানি বা আদানিদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক তো খুব একটা গোপনীয় বিষয় নয়। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের বিশেষ আরামের সম্পর্ক রয়েছে। তাই দেশের ক্ষমতাশালো ব্যবসায়ীরাই সরকারের নীতি এবং প্রকল্পগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমনটি তারা ধারাভি পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে করছে। তবে মজার বিষয় হলো, অজিত পাওয়ার এবং পরবর্তীতে দেবেন্দ্র ফড়নবীস ওই নৈশভোজের বৈঠকের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করলেও আদানি এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি।
লেখক একজন স্বাধীন সাংবাদিক।